-->

অনিল ঘড়াই-এর 'বক্ররেখা' উপন্যাসের চিত্রিত শুকুরমণির জীবনকথা - ড. চঞ্চল কুমার মণ্ডল

প্রান্তিক জীবনপুটে 'বক্ররেখা' উপন্যাসে চিত্রিত শুকুরমণির জীবন কথা:

 

অনিল ঘড়াই-এর 'বক্ররেখা' উপন্যাসের চিত্রিত শুকুরমণির জীবনকথা - ড. চঞ্চল কুমার মণ্ডল

রেলওয়ের কর্মসূত্রে বিহারের প্রান্তিক জেলাভূমি সিংভূমে প্রবাসকালে, লেখক অজান্তে কখন সবহারানাে জনজীবনের সঙ্গে নিজেকে একেবারে হারিয়ে ফেলেছিলেন। ছিন্নমূল মানুষের হতাশা, দারিদ্র্য আর অশিক্ষাও কুসংস্কারের পাশাপাশি — শারীতি. স্বীকার করে নিয়েও কীভাবে জীবনে টিকে থাকার লড়াই করে যায় – তারই সতী সংঘাতময়রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন কথাশিল্পী তার বক্ররেখা' উপন্যাসে। উপন্যাসটি , ধারাবাহিকভাবে পাক্ষিক 'বসুমতি' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তী, ১৯৯৩ এর ২৮ শে ডিসেম্বর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

কথাশিল্পীর অন্যান্য সকল গল্প উপন্যাসের মতাে এই উপন্যাসের একদিকে যেমন হনত করা যায় – রুঢ়বাস্তবতার চাপ ও ভাষ; তেমনি পাওয়া যায় জীবনের উত্তাপ! নিত্য ঘটমান কাহিনীর মধ্যে অতিচেনা চরিত্রদের ভীড় ও লক্ষ্য করার মতাে। উপন্যাসের কথক খান চরিত্রের ভেতর দিয়ে স্বয়ং লেখকই মানুষের মৌলিক সমস্যাগুলির ভেতরে ঢুকে গিয়ে তাকে। অসহায় -সংকটাপন্ন পরিস্থিতিগুলি পরতে পরতে খুলে দেখাতে চেয়ে, কাহিনী চিত্রকে জীবন্তৰূপে ফুটিয়ে তুলেছেন ফলে, - লেখকের অপার সমবেদনায় গৃঢ়-গভীর সহমর্মিতার তুলিতে জটে ওঠা প্রতিটি চরিত্রের জীবন কাহিনীগুলি হয়ে উঠেছে হৃদয়স্পর্শী তথা মর্মস্পর্শীও।

উপন্যাসের মূলকাহিনীস্রোতে শাখা কাহিনী হিসেবে চিত্রিত হয়ে ওঠা এক পার্শ্বচরিত্র প্রান্তজ বৃহন্নলা নারী শকুন্তলা তথা, শুকুরমনির জীবন কাহিনীটি অত্যন্ত ট্রাজেডিঘন - মর্মান্তিক বেদনাবহরূপে ফুটে উঠেছে। লেখকের অনুসন্ধানী দৃষ্টি থেকে জানা যায়, এই শকুন্তলা তথা, শুব্রমনির পেটের দায়েই ভাভামুন্ডা থেকে উঠে এসে গুড় শেডের মালগুদামের সামনে ঝুপড়ি গেড়ে বসেছে। সিংভূম-চক্রধরপুর প্রবাস কালে লেখক প্রথম প্রথম হােটেল থেকেই রাতের খাওয়ার খেয়ে ফিরতেন। তখনও মেস চালু হয়নি। যাতায়াত কালে দূরের বস্তির ঐ ঝুপড়ি ঘরগুলােকে লেখক প্রায়ই লক্ষ্য করতেন। দেখতেন, বস্তিজীবনের ঐ আঁধার ঘুপচি ঘেরা ঘিঞ্জিপরিবেশের মেয়েরা কেমন করে রােজ হাঁড়িয়ার পসরা সাজিয়ে বসে। কী নিদারুণ ওদের জঠর সংকট- সমস্যা। ... এমনই এক রাতে লেখক তথা, কথক মাখনদা খাওয়া-দাওয়া সেরে রেললাইন ধরে বাসায় ফিরছিলেন। চারদিক চাপ -চাপ অন্ধকার। ফাকা রেলপথ। লেভেল ক্রশিং ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে যেতেই তিনি শুনতে পান ধস্তাধস্তির শব্দ! থমকে দাঁড়িয়ে কিছু আন্দাজ করে, পা টিপে টিপে এগিয়ে যান। গিয়ে দেখেন, পাতালপুরীর সেই অন্ধকারে দুটো ছেলের একটা ঝাপিয়ে পড়েছে মেয়েটির ওপর। অপর ছেলেটি দাঁড়িয়ে পথ-ঘাট দেখছে, আর পরবর্তী সুযোেগর অপেক্ষা করছে। লেখক যে এমন একটি বীভৎস নক্কার জনক ঘটনার মুখােমুখি হবেন, তা ওঁর ভাবনারও বাইরে। মেয়েটির ওপর ঝাফিয়ে পড়া লম্পট ছেলেটা হঠাৎ ‘এ মাগি হিজরে রে!' বলেই প্যান্ট পরতে শুরু করে। তারপর ওরা তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতির টের পেয়েই বেশ ঘাবড়ে যায়। অন্ধকারে চটি ফেলে খালি পায়েই দৌড় লাগায়। স্বয়ং কথক মাখনদা তথা লেখক, কাছে গিয়ে মেয়েটির মুখ থেকে ওর নাম পরিচয় জানতে পারেন। নাম শকুন্তলা তথা, শুকুমনি। মেয়েটিকে বস্তি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে সে রাতে তিনি বাসায় ফেরেন। কিন্তু মেয়েটির সেই আর্ত হাহাকার আর অশ্রুসিক্ত আঁখির কাঁপুনি। লেখকের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। লেখকের কানে তখনও সেই তাচ্ছিল্যময় হিজরে’ শব্দটি বেজেই চলেছে। এ লাঞ্ছিত নারীজীবনের প্রতি গভীর মমত্ববােধ সম্পন্ন লেখক হৃদয় তাই অপার সমবেদনায় বলে উঠেন একে হিজরে বলে পালিয়ে গেল, ওদের মতাে অপদার্থ যুবক ও অঞ্চলে আমার আর নজরে পড়িনি।'

 পথিবীর যত অনাহুত - সমাজ ঘৃণিত, লাঞ্ছনাময় প্রান্তর জীবন রয়েছে, তাদের প্রতি কর এমনই সমানুভূতিও সহানুভূতি দ্বিধাহীনভাবে বর্ষিত হয়েছে। লাঞ্ছিত মানবত্মার ক্রন্দন মৎকে চিত্তকে বার-বার ব্যথিত করেছে। লেখক তার অভিজ্ঞতার চোখ দিয়েই দেখেছেন, এই সমেনিদের মতাে ঈশ্বর সৃষ্ট অসহায় নারী জীবনের ওপর ‘বৃহন্নলা' শব্দটি সমাজ যে চাপিয়ে দিয়েছে, তা আদৌ ভালবেসে নয়। স্বয়ং লেখকের কথায়, - 'বৃহন্নলা' শব্দটি আমাদের দেশে অবজ্ঞা আর অবহেলা নিয়ে উচ্চারিত হয়। শুকুর ও ঐ অবজ্ঞার শিকার। শুধু সমাজের চোখে নয়, অব স্বামীর কাছেও। কারণ একসময় শুকুর বিয়ে হয়েছিল। তার স্বামী সংসার সবই ছিল। কিন্তু, সই সখ তার কপালে সইল না। বিয়ের মাত্র একমাস পরেই তার স্বামী রবার্ট তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে পথের ককুরে মতাে। এতে শুকুরের যে কোনাে ইচ্ছাকৃত ত্রুটি ছিল তা নয়। ত্রুটি তার দেহের । অথচ, দেহ সৌন্দর্যের দিক থেকে এই শুকুরমনি তথা, শকুন্তলা- কালিদাসের 'অভিজ্ঞানম শকুন্তলম’ নাটকের শকুন্তলার রূপের চাইতে কোনাে অংশে কম নয়। অত্যন্ত জীবন সংবেদী লেখকের বর্ণনায় ঐবিক্ষত নারী শুকুরমনির অনিন্দিত দেহ সৌষ্ঠব ফুটে উঠেছে অতি বাস্তবানুগ রক্ত মাংসের সজীব নারীরূপে ক্যালেন্ডারে হরিণ শাবক পরিবেষ্টিত পূর্ণযৌবনা যে শকুন্তলাকে আমি দু-চোখ ভরে দেখেছি তার সঙ্গে ঝােপড় পট্টি নিবাসী বনমালী হাজরার মেয়ে শুকুর কোনাে পার্থক্য নেই। একমাথা চুল, তাতে যদিও তেলের স্পর্শ নেই তবু সেই চুলের রেশমি উজ্জ্বল্য হতদারিদ্র্যে ম্লাননয়, বরং কেশবতীর টিকোলাে নাক, জোড়া ভুরুর নীচে ডাগরভাসা চোখ দুটিকে খাপ খােলা তরবারির মতাে প্রতিভ করে তােলে। ওর শারীরিক শােভা প্রস্ফুটিত পদ্মফুলের চেয়েও কোনাে অংশে কম নয়। এমন অনিল সৌন্দর্যের অধিকারিনী শুকুকে দেখে তাই, রবাটের মতাে চির পিপাসার্ত পুরুষমন তার পিপাসা মেটাতে বিয়ে করে। কিন্তু বিয়ের পরও রবার্টের সমস্ত কামনা-বাসনা অতৃপ্ত রয়েই গেল। রবার্ট-আউট হাউসের অনাথ যুবক। তার জন্মের পূর্বেই বাপ মারা যায়। তার মা ঐ যুবক সাহেবের বাংলােয় রাঁধুনির কাজ করত। সেই সাহেবেরই ঔরসজাত সন্তান এই রবার্ট। ওর মা'কে কারা মেরে ফেলে দিয়ে ছিল সঞ্জয় নদীর জলে (প্রসঙ্গ ক্রমে উল্লেখ্য লেখক তার শারীরি অসুস্থাবস্থায়, মৃত্যুপ্রাক্কালে এই-আউট হাউস’ নিয়ে একটি সুদীর্ঘ উপন্যাস লিখে যান -ঐ নামে।) অনাথ যুবক সেই থেকে ভাড়ায় রিকশা চালায় মদ খায় আর বেশ্যালয়ে যায়। ঝুপড়িতে মাঝে-মধ্যে ফেরে। বেশিরভাগ সময় চাতালে মেয়েছেলে দেখে রাতকাটিয়ে দেয়। এমন যার জৈবিক ক্ষুধা! সেই ক্ষুধার আগুন যদি না নেভে, তাহলে তাে সেই আগুনে শুকুরকে পুড়তেই হবে। আসলে, লেখকের ভাষায় - 

শুকুপূর্ণাঙ্গ নারী হলেও তার কোনাে সহবাস ক্ষমতা নেই, শুকু পূর্ণ যৌবনা নারী হয়েও এক ধরনের বৃহন্নলা।

এমন অভিশাপ গ্রস্তযুবতী তার নারী জীবনের অপূর্ণতায়, ব্যর্থতায় হতাশায় কেঁদে মরে। স্বামী রবার্টকে সে সুখ দিতে পারেনি। নারীর সাধারণধর্ম থেকে সে বঞ্চিতা। সমাজের কাছে স্বামীর কাছে সে ঘৃণ্য, চিরলাঞ্ছিতা। এমন অভিশাপগ্রস্ত জীবনকে সে কেমন করে বয়ে নিয়ে বেড়াবে। অথচ, তার ঐ দুঃখী -সর্বস্বান্ত মানুষ রবার্টকে সে মন-প্রাণ দিয়ে ভালবাসে। কিন্তু সেই ভালবাসায় তার দেহলতা রবার্টের দেহে পেঁচিয়ে জড়িয়ে থাকতে পারেনি। বন্ধনটি তাহলে শুধু ঐ দেহের পিপাসায় ? ভালবাসার কি কোনাে বন্ধন হয় না? কতখানি জীবনদরদী হলেই যে, ভালবাসা সম্প লেখকের এমন জীবনভাবনা ফুটে ওঠে, তা এই অভিশপ্ত নারী শুকুরমনির বিক্ষত জীৱন বােঝা যায়। জীবন সংবেদী লেখক তাই এই নারীর ব্যর্থ ভালবাসা প্রসঙ্গে বলেন : 'ভালবা তাহলে শরীর পেচিয়ে বেড়ে ওঠা শিমলতা মনকি শুখা গাছের ডাল - যেখানে ফুল-ফল এমনকী নতুন পাতাও আসে না।' হতাশাগ্রস্থ-চিরবুভুক্ষু নারী এই শুকুর মনির জীবন অনুধ্যানেই এখানে প্রমান করে আগে দেহ পরে, প্রেম।

অশিক্ষা-কুশিক্ষার ঘনান্ধকারে নিমজ্জিত এই বস্তি জীবনের নর-নারীরা অকালেই হারিয়ে যায়। যেমন করে হারিয়ে গেছে এই অভিশপ্ত নারী শুকুরমনির মাও সর্বাঙ্গে যৌনঘা নিয়ে। তার মেয়ে হয়ে শুকুমনি তার মায়ের প্রতি ঘৃণাপ্রকাশ করতে পারে না। কেবল মাতৃহারার যন্ত্রনায় সে আড়ালে গিয়ে বুভাসিয়ে কাঁদে। বাপ বনমালী ঘা শরীর নিয়ে প্রায় নড়তে চড়তে পারে না। এমন শ্বাসরােধকারী মন্দভাগের মেয়ের জন্যে কোন্ বাপের না চিন্তা হয় ? কুষ্ঠ রােগগ্রস্ত চিরবৃভক্ষ বদ্ধ বনমালী হাজরারও তাই চিন্তার শেষ নেই। মেয়ের অভিশপ্ত, ব্যর্থ জীবনের জন্যে নিরুপায় পিতা বনমালী, কেবল অসহায় ভাবে হা-পিত্যেশে বুক চাপড়ায়। বনমালী যেন প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনা পােতা আবিষ্কার’ গল্পের সেই কন্যাদায়গ্রস্থ-যামিনীর বৃদ্ধা মা'। যে বৃদ্ধা তার মেয়েকে কেবল পাস্ত করে যাওয়ার অপেক্ষায় তার শেষপ্রাণ বায়ুটুকু যেন ওষ্ঠে লেগে রয়েছে। নায়ক নিরঞ্জনের জন্য বৃদ্ধার সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষা বিস্মিত করে। মেয়ের জন্যে বৃদ্ধার উৎকণ্ঠার শেষ নেই। ছানি পড়া চোখে নিদও নেই তার। বৃদ্ধ বনমালী হাজরারও সেই একই অবস্থা। তাই সে তার উৎকণ্ঠার কথা কথক মাখনন’ কে জানিয়ে বলে : 

কাচা বয়স, আগুন বয়স। মায়াঝিটাকে লিয়ে আমার যে সুখ নেই বাবু। রাতভর মােটে দু-চক্ষুর পাতা এক হয় না।

রক্ত-পুজ শরীর নিয়ে এই বৃদ্ধ বয়সেও সে পেটের দায়েই রামশেঠের হয়ে কাজ করে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে বিলাসপুর ঝার গুদা থেকে সস্তাদরের চাল বস্তা ট্রেনের সিটে তলায় লুকিয়ে আনে, রামশঠ তাকে বস্তা প্রতি পাঁচ টাকা দেবে এই আশায়। তাছাড়া, ট্রেনে আসা যাওয়ার পথে ভিক্ষে করেও কিছু রােজগার হয়। রাম টেনে নামায়। ঐ মুহুর্তে সে পুলিশের চোখে ধরা পড়লে বেদম মার খায়। ব্যাধিজর্জর ঘা’ শরীরে শুধু স্কুলের বাড়িই নয়, নানান খিস্তি খেউড়ে, রেল পুলিশেরা তার অভাবী মনটাকেও জর্জরিত করে তােলে। ওদের ঐ অপমান জনক কথায় তার বুড়ােহাড়ের কানও ঝা ঝা করে। এ শালা কুষ্ঠ রােগীর বাচ্চা, খেতে পায় না পরতে পায় না তবু রাম শেঠের সাথে কারবার করে।... এর একটা ধিঙ্গি মেয়ে আছে, সে মাগিতে পিওর প্রস।...' এভাবে, অসহায় বনমালী হাজরাকে শুধু নিজেই নয়, তার মেয়ের ঐ অভিশপ্ত জীবন লাভের জন্যেও পিতা হিসেবে তাকে বার-বার এমন -প্রস' 'বৃহন্নলা' হিজরে মতাে কতই না বিদ্রুপ - তাচ্ছিল্যময় শব্দগুলাে ৱােজ-রােজ শুনতে হয়। মানুষের প্রতি মানুষের এমন নির্দয়-নিষ্ঠুর আচরণে, মানবতার ইন অপমানে পাঠকমনও ভীষণ ভাবে ধাক্কা খায়। লজ্জিত হতে হয়। আসলে, সেই বনমালী হাজরার মতো চিরঅসহায় মানুষের। গায়ে ফুটে ওঠা কুষ্ঠ রােগের ঘাকে রােগ নয়, অভিশাপ মনে করে। মেয়ের শরীরের চেহারায় নারীত্বের গুণ না থাকাকেও মনে করে অভিশাপ। তাই এত অভিশাপ নিয়েও জীবন ন্যুব্জ-কুব্জ হয়ে নুইয়ে পড়তে চায়। কতকাল আর এমন করে এ জীবন এরা টিকিয়ে রাখতে পারে? গভীর হতাশায় ব্যর্থতায় তাই বনমালী হাজরা বলে ওঠে :

এ তিতা জীবন মোর আর ভালো লাগে নি।

পাঠক মনও এমন কষ্ট কর জীবন ব্যথিত হয়। শ্বাসরোধ হয়ে ওঠে। তবুও ঐ শ্বাসরোধকারি জীবনের অন্তিম পরিণতি জানার জন্য উৎসুকো পাঠকমন ঘটনার স্রোতে এগিয়ে যায়। নির্দয় কর্তব্যরত রেলপুলিশ 'রেড়হ্যান্ডে' ধরেছে বলে বনমালী হাজরাকে হাজতে ঢোকায়। অসহায় পিতার জন্যে মেয়ে শুকুরমণি বুক চাপড়ে কাঁদে। পুলিশী নিগ্রহের হাত থেকে অসুস্থ রুগ্ন পিতাকে বাঁচাতে সে কথক মাখন দা'র রেলওয়ের অফিষে ছুটে যায়। মাখনদা'র পা'য়ে পড়ে কাকুতি-মিনতিতে সে অশেষ অনুরোধ করে রেলপুলিশের সঙ্গে কথা বলে তার অসহায় পিতাকে এ যাত্রায় ছেড়ে দেওয়ার জন্যে। এভাবে সমাজের চোখে বৃহন্নলা নামে পরিচিত এই অভিশপ্ত নারী শুকুরমণির সংকটাপন্ন, রক্তিম-বেদনাবহ সংগ্রামী জীবন চিত্র উপন্যাসের তৃতীয় অধ্যায়ের পর আবার শুরু হয়েছে একেবারে অষ্টম অধ্যায়ে গিয়ে। এই অষ্টম ও নবম অধ্যায়ের মধ্যেই এই লাঞ্ছিত নারী শুকুরমণির সংগ্রামী জীবন কাহিনির পরিসাপ্তি ঘটেছে।